Sunday 1 September 2013

বাড়িওয়ালা ভাড়াটে কথা



হাত থেকে দেশলাইটা পড়ে গিয়ে অনেক 
গুলো কাঠি ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল

বিরক্ত মন আরো বিরক্ত হল অনির্বানের 

এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ 
বাড়িওয়ালা এসেছে হঠাত
- এসময় উনি আসেননা সাধারনত
দরজা খুলে অর্ধেক মুখোশে অনির্বান 
স্বাগত জানায়  
আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে 
চা প্রিয় অনির্বান 
চা এর নেশায় ডুবিয়ে রেখেছে বাড়িওয়ালাকে 

ভরাকাপ চা নিয়ে ভরপেট কথা 
হয় বেশ ভাড়া দেবার সময় 
বাড়িওয়ালা ভাড়াটে কথার মরেল্টা 
এই রকম 
- এদেশে প্রথম এসে আপনার বস্তিবাড়ি থেকে 
ভালোবাসার মতো অনেক কিছু পেয়েছি 
তারপর আপনার  ঝা-চকচকে দ্বিতীয় বাড়ি
কিন্তু এখানে  এসে সব হারালাম 
- এমনকি প্রেম প্রকৃতি 

এখানেও রাতে বৃষ্টি হয় শব্দ 
শুনি মাত্র 
বৃষ্টি শেষের হাওয়া মনে প্রাণ আনে 
তবু ওবাড়ির মত নয় 

ওখানে বৃষ্টি শুরু হলে 
কুঁড়ি সহ টগর ফুলের ডালপালা 
জানলায়  এসে কথা বলত 
দেখাত কিভাবে -  জল পড়ে  পাতা নড়ে 

[দুই]

একদিন ভোরের আলোয়
ঝলক দিয়েই  হারিয়ে গেল সে
যেমন হয় নিত্যদিন
আমার চলার পথে

উত্সুক আমি
উন্মুখ থাকি অপেক্ষায়
আলেয়া আবিস্কারের পর আরো
ইচ্ছে শক্তি জেগে উঠলো
 
মুলি বাঁশের চাটাই ঘেরা
চায়ের দোকানে এককাপ চা
নিয়ে ভোরের বার্তা দেখা রুটিন
তখন আপনার্ বস্তি  বাড়িতে
নিজের হাতে গ্রীন টি
রেঁধে খাওয়াতে শিখিনি 
প্রিয়জন কে

ওকে জানতে একফুট  দুইফুট
এমনকি তিনফুট চা খেয়েছি

নিজস্বতায় ছিল ভারী সুন্দর 
অহংকার জন্ম থেকে
পঙ্গু ছেলে কাঁখে 
ফিজিওথেরাপির পথে ক্লান্ত 
জীবন যেমন যায়
 
রূপের অহংকার এনজয়
করার মত 
এরপর স্মৃতিতে গেঁথে রাখার মত
এমন কোনো ঘটনা হয়নি

ক্লান্ত মনে সে এল বহুদিন পর
বহু দৃশ্য দৃশ্যান্তর
সাদা কালো নিঠুর স্টিল ছবি
আমার সামনে চলমান আজও ... 

তখন শরত 
পথের সারমেয় ক্রমশ ক্লান্ত 
শিউলির গন্ধে ভর 
আমরাও বিভোর 
দূরের বাজনা আরো সুন্দর 
আগমনী গান আর নিরলস জীবন 


কোলে পঙ্গু শিশু চোখে স্বপ্ন 
পুজোর আগে কিছু  আয় 
মন্দার বাজারে বিজয়া 
দশমীর কাটা নিমকির 
হিসেব দ্যাখে আড়াল পর্দার  চোখ 

বাস্ত মা , একটু দুরে অসহায় শিশু 
ভায়োলেন্ট 
ভোরের অসহ্য পৃথিবী 
ছুড়ে দিচ্ছে অজানা রাগে 

ভোরের বার্তায় চোখ রেখে  শুনি   
সেই  মায়ের মুখে  'বানচোত ছেলে' 
শুনি অধৈর্য মায়ের সন্তানের 
গালে একাধিক চড় মারার শব্দ  

নতুন করে দেখলাম 
জীবনের একাঙ্ক চিত্র 
তারপর ভুলে যেতে চাইছিলাম  
বারবার সেই শব্দ দৃশ্য 
আর সময় 

এই মা সুযোগ মিলতেই 
আমাকে মনের অনেক কথা 
বলেছে সময়ের ফাঁকে অলপ কথায় ....

দেওয়ালির সন্ধে রাত 
মন চাইছে একটা কবিতা লিখি 
- আয় পেত্নী আয় 
সোহাগ করি তোকে ঘোর 
অমাবস্যায় শেওড়া গাছের তলায়   ... 

ইচ্ছে ছিল শব্দবাজির  সন্ত্রাস
থেকে  দুরে গিয়ে মা মাটি আর 
মানুষ নিয়ে দীপাবলীর ছবি আঁকি 
কিন্তু চায়ের নেশায় আমি 
আবার সেই আলেয়ার কাছে যাই 

চারি দিকে চিনে টুনি ল্যাম্প 
হাতে গোনা কিছু প্রদীপ 
আর মোমবাতির নিয়ম রক্ষা 

সকলের মুখে তুবড়ির  আলো 
সেখানে দেখি সেই 
পঙ্গু শিশুর আনন্দ আকাশ ছুঁয়ে
প্রদীপ  জ্বেলে ওড়ে 
লুটিয়ে পড়ে মায়ের আটখানা আল্লাদ 
পৃথিবীর চিরন্তন স্নেহ 
[ ক্রমশ]

No comments:

Post a Comment