Saturday 28 September 2013

কাম

আমৃত্যু জেগে থাকে কাম   
শুধু যোগ্যতা হারিয়ে যায়  
শত চেষ্টার পর
বারবার  
বিনম্র আবেদন

Friday 20 September 2013

শুকনো পাতায় প্রেম


-    নীরাজনা
এক জোড়া শুকনো পাতার মত 
একটা প্রজাপতি 
উড়ে এসে জুড়ে বসতে চেয়েছিল 
আমার শরীরে 
বারবার 

অফিসের গাড়ি ধরে শহরে যাব
তাড়া রয়েছে 
তবু ওর জন্য থামলাম 
প্রত্যক্ষ করলাম প্রয়োজন
একটা নিশ্চিত আশ্রয় 

আমার জানুতে নতজানু 
হয়ে আঁকড়ে ধরার ইচ্ছে
অনুভব করি 

জুতোর ফিতে বাঁধা বন্ধ 
নিথর আমি
–একটা শুকনো গাছের শাখা 

দেখলাম ওই শুকনো পাতায়
আছে প্রাণ আছে সংশয় 
মধ্যিখানে দাবি 
বিচিত্র রং রূপ লাবন্য 
রেণুর দ্যুতিরেখা অজস্র সৃষ্টি 

আমার শাখায় প্রেম জাগলো 

দেখলাম মৃদু কম্পনেও 
শুকনো পাতার আত্মরক্ষার নিজস্বতা 

উড়ে যায়  দূরে যায় আবার 
আসে কাছে 
দক্ষিনা  হাওয়া বইছিল  
অনুকূলে আমার ভালবাসা 
 আমি রসিক 
হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ 

একটা ভুতুরে রং নিয়ে এসেছিল 
প্রথমবার অবজ্ঞা করেছি 
দ্বিতীয়বার নিজের মনে জিজ্ঞাসা 
আমি অবাক  হয়ে চোখের মণি 
স্থির রেখেছিলাম ...

ডানামেলা শরীরে বিচিত্র রং কারুকার্য 
আত্মরক্ষার জন্য একটা বোরখা 
- অদ্ভুত ধূসর পাখনা 

বোরখার আড়ালে একি মোহমায়া !
আমিতো  ঋশ্যশৃঙ্গ  নই !

সেই দিনটা ছিল শুক্রবার 
নিজেকে ভালবাসার  দিন 
তাই প্রত্যাখান করতে পারিনি 
শুকনো পাতায় প্রেম 

সত্যি বলতে ওই অস্থির পাতা 
দক্ষিনা বাতাসে গা ভাসিয়ে আমার 
ঘরে ঢুকতেই নিঠুর  আমি  
গৃহবন্দি করলাম তাকে 

শহরে ছুটছি অথচ মন 
ফিরে আসে বারবার 
দ্রুত ফিরে এসে দেখি 
সে নেই 
খুঁজেই পাচ্ছিনা 

কার্যত দিনটা আমার ভোগে গেল 
তারপর থেকে মুড অফ
দুদিন অপেক্ষায় থেকে তিন 
দিন পর আচমকা দেখা 


নীরব অভিমানে একটা ক্লান্ত প্রাণ 
পড়ে আছে আমার ঘরের এক কোণে 
আহত মন অভুক্ত শরীর 
নেই প্রত্যাশা আপন জিজ্ঞাসা 
রবিবারের রাত্তিরে 

ভাদ্রের পূর্নিমা 
মাঝরাতে পাখিরা ডাকে
আমার চেনা শালিক
ঘাড়ের  লোম উঠে যাওয়ার দুঃখে
কেঁদে ওঠে 

আমি রাত জাগি 
কবিতা লেখার ভনিতা ক’রে প্রেম 
সাগরে ডুবদিই 

অপরাধী আমি
পাহারাদার সেজে মদের গন্ধে বিভোর 

প্রায় ষাট বছরের পুরনো একটি পাতা 
দেখতে চাইছি  তলানিতে একবিন্দু 
রসবোধ সামান্য প্রচেষ্টার পর 
দেখি শিশিরের মত বিন্দু বিন্দু সবুজ
যৌনরেখা ক্রমশ জেগে উঠছে

ভোররাতে চোখ বুঁজে আসে 
বুকের মাঝে আলতো ছোঁয়ায়
ভাঙে  ঘুম 
দেখি হৃদয়ের কাছে রামধনু আঁকা 

জানলার ফাঁক বেয়ে সূর্যকিরণ 
দেখি ওই  জোড়া শুকনোপাতা 
ক্ষনিকের  অতিথি আমার
ঘর প্রদক্ষিন করে
তারপর আলোর গতিতে উড়ে যায় 
নিজের ঠিকানায় 





Sunday 15 September 2013

পথ হারিয়ে



পালানোর সুন্দর পথটা ছিল 
মাঝপথে 
কিন্তু আসল সীমানা পথ 
ভুলে সে হারিয়ে গেল 
জুলাই-এর  একদিন 
  

তারপর ফিরে এসে 
শত চেষ্ঠা বৃথা 
উল্টে ক্ষতি হলো অনেক 
অবমাননাও সহ্য করতে হল 
পথ হারানোর পর 


... প্রথাগত ক্রীতদাস 
পেশাগত আত্মসমর্পনের পথ 
ধরে স্নায়ু যুদ্ধের মন 
রাখে ইনবক্স-এ প্রতিদিন 

প্রশ্ন ভাসে 
কেন মাঝপথে পালানো হয়নি 
কেন কিসের ভুল 
তার  পোস্টমর্টেম 

আসে অজস্র মেইল 
তবু নেই প্রত্যয় আশা 
পি এম রিপোর্টও  অস্পস্ট 

যারা হাতছানি দিয়েছিল 
তাদের সেল ফোন বন্ধ 

পথ হারানোর পর 
আবার পালানোর অনির্দিষ্ট পথটা 
সে খোঁজে আজও   

Saturday 7 September 2013

।। ইচ্ছেবাষ্প ।।



আজ আমার হাভানা চুরুট 
খেতে ইচ্ছে করছে খুব 

হৃদয় থেকে সৌখিন এই ইচ্ছেবাষ্পটা 
বেরিয়ে আসতে  চাইছে বারবার  


পকেট -এ মুরদ নেই 
- আমি বাহাদুরের মত
হিলকার্ট রোড ধরে হাঁটছি
খুঁজছি গাছের ছায়া 

এখানে গাছ আছে, ছায়াও আছে 
কিন্তু এলিয়ে  বসার মত পরিসর 
পরিস্থিতি নেই
আপাত ফাঁকা নোঙরা ফুটপাথে 
ওরা নেই 

ওরা আসছেনা, আসতে পারছে না 
পাহাড় বেয়ে  বেশ কিছু দিন 
- পায়ে পায়ে রঙিন কোমল  
পমপম চপ্পল প্রায় অদৃশ্য   

দূরে কোথাও  একটা ভাষণ হচ্ছে 
- পরিবর্তন এর পর... 
দীর্ঘ বন্-ধ  রাজনীতি  

আবার হাসপাতাল মোড়ে 
রাস্তার  ধারে  দাঁড়িয়ে চলছে কথা কাটাকাটি
- প্রথম পরিচয়ের দিন থেকে 
দিনে তিন তিনবার ফোন...! 
এখন কোথায় গেল... ? 
কিসের পরিবর্তন ? 

ফিরে দেখি রিক্ত জীর্ণ এক  নারীকে
একটি শীর্ণ লম্পট লোকের দিকে আঙুল তুলে...

দূরের সেই ভাষন, কে দিচ্ছে  কে জানে,
ক্রমশ কাছে আসছে 

- পরিবর্তনের এক কান্ডারী বোধহয়!  

আমি চলছি , একটা চারমিনার কেনার মত 
কিছু আছে কিনা 
দেখছি 
প্রায় না খেতে পাওয়া বাঙালিদের 
প্রবল দাপুটে মিছিল দেখে অবাক হচ্ছি 
অন্তরে মুচকি হাসছি 

আমি চলছি বার রেঁস্তরা পেরিয়ে
অগত্যা প্রিন্স হেনরির খোঁজে 
যখন পাহাড়ি রানী কে নিয়ে 
রাজরানী একরোখা 

হঠাত-ই থামতে হলো 
দেখি শুভাকাঙ্খী পথ আগলে 
কুশল বিনিময়ের ভাষা বদলেছে 
আজ অনিচ্ছাতেও থামি 
থামতেই হয় 
যেভাবে ভালবাসা দাঁড়ায় 

তারপর আমি আর পথ 
একা একা হাঁটা 
তরাই এর বালু কণা 
ভাষণের শব্দ 
স্পষ্ট হয় আরও  
- বাংলা ভাগ হতে দিচ্ছি না...

আমার মনে তখন 
আমি আমরা ও সে 
- ডুয়ার্স এর সেই  
নেপালি মেয়েটির আদিবাসী রঙে 
মিশে যাওয়া প্রেম   
আর আমার প্রথম দিকের কবিতা 

-ডিভোর্স  দিইনি আজও 
ভালোবেসে আছি মোবাইল 
কবিতা শোনাব তোমায়  
জয়  গোস্বমীর
আমি এথেল-বাড়ি   যাব  ... 

ক্রমশ দৃশ্যান্তর

দু একটি লোক কান পেতে আছে 
নিউক্লিয়াস মোড়ে  
যেখানে সব বিপ্লব শেষে  
কুশপুতুল দাহ 


আমি ভাবি দেশের অর্থনীতি 
আমার কোম্পানি 
দেশের পরিচালক দল 
একই পথে এক দৈন্য দশা! 

আমার হাভানা চুরুট খেতে ইচ্ছে করছে খুব 

আমি থামি
একটু পাহাড়ি ভাষন শুনি 
সেই ইচ্ছেবাষ্প কথা দূর  দর্শনে
এক সময় যে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘ হয়েছিল
মানে ওঠানো হয়েছিল 
কিছু পরিবর্তনের পর 
সে এখন পাহাড় থেকে 
আরও দুরে যেতে চাইছে  

যিনি বলছেন 
তিনি হেরো নেতার 
পায়ের কাছেই বসতেন একদিন 
কিন্তু আজ 
কি লম্বা সফর স্বপ্ন

আজ আমার তোমার হাভানা  চুরুটে
লম্বা টান দিতে ইচ্ছে করছে খুব 

Sunday 1 September 2013

বাড়িওয়ালা ভাড়াটে কথা



হাত থেকে দেশলাইটা পড়ে গিয়ে অনেক 
গুলো কাঠি ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল

বিরক্ত মন আরো বিরক্ত হল অনির্বানের 

এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ 
বাড়িওয়ালা এসেছে হঠাত
- এসময় উনি আসেননা সাধারনত
দরজা খুলে অর্ধেক মুখোশে অনির্বান 
স্বাগত জানায়  
আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে 
চা প্রিয় অনির্বান 
চা এর নেশায় ডুবিয়ে রেখেছে বাড়িওয়ালাকে 

ভরাকাপ চা নিয়ে ভরপেট কথা 
হয় বেশ ভাড়া দেবার সময় 
বাড়িওয়ালা ভাড়াটে কথার মরেল্টা 
এই রকম 
- এদেশে প্রথম এসে আপনার বস্তিবাড়ি থেকে 
ভালোবাসার মতো অনেক কিছু পেয়েছি 
তারপর আপনার  ঝা-চকচকে দ্বিতীয় বাড়ি
কিন্তু এখানে  এসে সব হারালাম 
- এমনকি প্রেম প্রকৃতি 

এখানেও রাতে বৃষ্টি হয় শব্দ 
শুনি মাত্র 
বৃষ্টি শেষের হাওয়া মনে প্রাণ আনে 
তবু ওবাড়ির মত নয় 

ওখানে বৃষ্টি শুরু হলে 
কুঁড়ি সহ টগর ফুলের ডালপালা 
জানলায়  এসে কথা বলত 
দেখাত কিভাবে -  জল পড়ে  পাতা নড়ে 

[দুই]

একদিন ভোরের আলোয়
ঝলক দিয়েই  হারিয়ে গেল সে
যেমন হয় নিত্যদিন
আমার চলার পথে

উত্সুক আমি
উন্মুখ থাকি অপেক্ষায়
আলেয়া আবিস্কারের পর আরো
ইচ্ছে শক্তি জেগে উঠলো
 
মুলি বাঁশের চাটাই ঘেরা
চায়ের দোকানে এককাপ চা
নিয়ে ভোরের বার্তা দেখা রুটিন
তখন আপনার্ বস্তি  বাড়িতে
নিজের হাতে গ্রীন টি
রেঁধে খাওয়াতে শিখিনি 
প্রিয়জন কে

ওকে জানতে একফুট  দুইফুট
এমনকি তিনফুট চা খেয়েছি

নিজস্বতায় ছিল ভারী সুন্দর 
অহংকার জন্ম থেকে
পঙ্গু ছেলে কাঁখে 
ফিজিওথেরাপির পথে ক্লান্ত 
জীবন যেমন যায়
 
রূপের অহংকার এনজয়
করার মত 
এরপর স্মৃতিতে গেঁথে রাখার মত
এমন কোনো ঘটনা হয়নি

ক্লান্ত মনে সে এল বহুদিন পর
বহু দৃশ্য দৃশ্যান্তর
সাদা কালো নিঠুর স্টিল ছবি
আমার সামনে চলমান আজও ... 

তখন শরত 
পথের সারমেয় ক্রমশ ক্লান্ত 
শিউলির গন্ধে ভর 
আমরাও বিভোর 
দূরের বাজনা আরো সুন্দর 
আগমনী গান আর নিরলস জীবন 


কোলে পঙ্গু শিশু চোখে স্বপ্ন 
পুজোর আগে কিছু  আয় 
মন্দার বাজারে বিজয়া 
দশমীর কাটা নিমকির 
হিসেব দ্যাখে আড়াল পর্দার  চোখ 

বাস্ত মা , একটু দুরে অসহায় শিশু 
ভায়োলেন্ট 
ভোরের অসহ্য পৃথিবী 
ছুড়ে দিচ্ছে অজানা রাগে 

ভোরের বার্তায় চোখ রেখে  শুনি   
সেই  মায়ের মুখে  'বানচোত ছেলে' 
শুনি অধৈর্য মায়ের সন্তানের 
গালে একাধিক চড় মারার শব্দ  

নতুন করে দেখলাম 
জীবনের একাঙ্ক চিত্র 
তারপর ভুলে যেতে চাইছিলাম  
বারবার সেই শব্দ দৃশ্য 
আর সময় 

এই মা সুযোগ মিলতেই 
আমাকে মনের অনেক কথা 
বলেছে সময়ের ফাঁকে অলপ কথায় ....

দেওয়ালির সন্ধে রাত 
মন চাইছে একটা কবিতা লিখি 
- আয় পেত্নী আয় 
সোহাগ করি তোকে ঘোর 
অমাবস্যায় শেওড়া গাছের তলায়   ... 

ইচ্ছে ছিল শব্দবাজির  সন্ত্রাস
থেকে  দুরে গিয়ে মা মাটি আর 
মানুষ নিয়ে দীপাবলীর ছবি আঁকি 
কিন্তু চায়ের নেশায় আমি 
আবার সেই আলেয়ার কাছে যাই 

চারি দিকে চিনে টুনি ল্যাম্প 
হাতে গোনা কিছু প্রদীপ 
আর মোমবাতির নিয়ম রক্ষা 

সকলের মুখে তুবড়ির  আলো 
সেখানে দেখি সেই 
পঙ্গু শিশুর আনন্দ আকাশ ছুঁয়ে
প্রদীপ  জ্বেলে ওড়ে 
লুটিয়ে পড়ে মায়ের আটখানা আল্লাদ 
পৃথিবীর চিরন্তন স্নেহ 
[ ক্রমশ]