Friday 8 March 2013

দুই বন্ধু দেশ


দুই বন্ধু দেশ
    -নীরাজনা

সীমান্তে কাঁটাতারের এপারে ছুটে চলেছি
টেলিফোনের বোতাম টিপেটিপে
এক্সক্লুসিভ খবরের সন্ধানে

সংবাদ শিরোনাম
রাষ্ট্রপতির হোটেলের বাইরে ফাটল বোমা
খবরের পেটে হিংসার ছবি
তাণ্ডব বরিশালে

আমি অবিচল লিখতে
এপারে ছুটে আসছে ওরা
হিংসার তাণ্ডব থেকে মুক্তির খোঁজে
- বলছে
শান্তির নীড়ে একটু জায়গা দাও

এখুনি রেশন কার্ডের প্রশ্ন অপ্রয়োজন

অথচ সেদিন
মুক্তি যুদ্ধের সময়, ছোটবেলায়
দেখেছিলাম সিরিঞ্জ-এর  স্তুপ
আমাদের স্কুলের মাঠে
গোলপোস্ট এর  ধারে


রাতারাতি অজস্র সরকারি খড়ের চালা
তার নিচে অগুন্তি মানুষ
বাঙাল ভাষা তখন বুঝিনা

ইস্কুলে ছুটি হঠাত কেন
সবুজ রং- সেনাবাহিনী
ভারী বুটের শব্দ  দেখি
ইস্কুলের মধ্যে হাসপাতাল

প্রথম শুনলাম অনেক অজানা শব্দ 
শরনার্থী বলে একটা শব্দ শিবির
ছবি আঁকত সেই দিনটির
একাধিক রেডক্রস ভ্যান দাঁড়িয়ে

আকাশে বোমারু  বিমান , আমি ভাবি
মেঘের গর্জন, মা বলত না
তখন আমি বুঝতামনা
কলেরা কাকে বলে

জাতীয় রাস্তার ধারে
অগুন্তি অচেনা মানুষ
মধ্য বঙ্গে বন্যা
গঙ্গা ফুঁসছে, মিশছে পদ্মায়
থৈথৈ জলে তখনও জন্মায়নি সীমান্তে
কাঁটা তারের বেড়াজাল


অথচ বহুদিন পর
ওদেশে ‘ওরা’ যখন ক্ষমতায়
প্রচুর মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল এপারে
দাক্ষিন্যে দিনাজপুরে সেই হিংসার পর
এই কয়েক বছর আগে

আজও ছুটে চলেছি আমি, ছুটছে
সীমা সুরক্ষা বল কাঁটা তারের এপারে
দুই দেশের প্রহরী সীমান্ত বরাবর

তার মাঝখানে অনেক নদী
যেমন মরা মহানন্দা
জেগে উঠে শুধু বর্ষায়, আপন বেগে পাগল
ফিবছর ভাঙ্গে পাড়, নুয়ে যায়
কাঁটা তারের বেড়া
ভাঙ্গনে বিলীন দুদেশের সীমারেখা

-   এক করে দেয় জমি
তোমার আমার সোনার বাংলার
নতুন সীমানা
ছিটমহলের মত জেগে ওঠে আবার
এক সীমান্তে দুই বন্ধু দেশ

এবং বিকল্প ২১ মার্চ ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত  

No comments:

Post a Comment