Sunday 9 November 2014

রাতের শিলিগুড়ি : ডোন্ট মাইন্ড স্যার


রাতের শিলিগুড়ি : ডোন্ট মাইন্ড স্যার

মনের সংশয় মূহুর্তে উপেক্ষা করলাম
রাজি হলাম মাতাল রিক্সাওয়ালার শর্তে
সেই রাতে এক রাজার মত মন জেদ
তৈরী হয়েছিল আমার
আড্ডার মাঝে হঠাত পারিবারিক অনুশাসন
আমার মস্তিস্কে চাঞ্চল্যর  কারণ
তবুও বলছি আমিই ঠিক একশ ভাগ
লুকিয়ে রাখি গোপন রহস্য কথা

সেভক রোডে তখন গুরুনানকের জন্য
আলোক মালা
তাকে পিছনে ফেলে আমি চলছি দিব্যি
কথা দিয়েছিলাম বলে জানতে চাইছি কারণ
তখন রক্তে আমার বইছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জ
হৃদয়ে বইছে 'কথা দু'কথা করে
বরফের পাথর ভাঙ্গা জল
বাঁধ ভাঙ্গা ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে
অপর প্রান্তে

দিব্যি চলেছি আমি
দূরভাষে চলছে প্রতিবাদ প্রতিরোধ
তারপর যখনি চেয়েছি প্রতিকার
দৃশ্যের পরিবর্তন

দেখি মাতাল রিক্সাওয়ালা আমায় নিয়ে
বৃত্তাকারে ঘুরছে সেভক মোড় ছেড়ে
হিলকার্ট রোডে
আপত্তিকে আমল দিচ্ছেনা
ভেনাস কে পিছনে রেখে
আকাশের দিকে ছুটছে
আমার জন্য অজ্ঞাত মাতাল সারথির
তিনচাকা

কিছু ভাববেন না স্যার
বেইমানি করব না
আমার হৃদয় দিয়ে আপনাকে তিনবাত্তি
পৌঁছে দেবো
আজ একটু খেয়েছি... বুঝলেন

দিনের শেষে হাল ছাড়া মাতাল আমিও
ঈশ্বরকে প্রেম নিবেদন করছি
বাধ্য হয়ে করছি প্রাণ ভিক্ষা
এমনকি বেসামাল সারথির কাছে

এয়ারভিউ মোড়ে চলছে জটলা
বেল্ট হাতে একে অপরকে দিচ্ছে তাফালিং
আমার মাতাল সারথি আচানক শাসক
- এই দারু খেয়ে মাস্তানি ... ভরে দেবরে
আর আমি নীরবে বলছি
- বানচোত চলনা এখান থেকে

যেমন চলছে দু' পা তেমন তিনচাকা
কখন পৌঁছাবো জানা নেই
প্রাণ  হাতে করে বসে আছি

শেষে ব্রীজের এপ্রান্ত থেকে হেঁটেহেঁটে
রিক্সা টানা দেখছি
পঞ্চাশ  পেরোনো পা দুটো কিভাবে
রাস্তা কামড়ে চলছে ধীরে ধীরে
মনে ভয় হৃদয় বেরিয়ে যাবেনাতো

তারপর মহাবিপদ
ব্রীজের ঢালে এসে ব্রেকহীন হাসি
রিক্সা নামছে হুহু করে
আমি দম  বন্ধ করে আছি
বেসামাল হয়ে ধাক্কা খেলে
হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা
খুঁজে পাওয়া যাবেনা 
ডান পাশ দিয়ে চলছে অজস্র
ভারী  যান টোকা মারলেই এক সেকেন্ডে ছবি

সেই গতি ঝংকার মোড়ে
এনে দিয়েছে আমাদের
ততক্ষনে আমার ঈশ্বর কে অগুন্তি প্রেম
নিবেদন করে বলেছি অনেক কথা

দু'জন কে ফোন করলে  একজন সুন্দর
করে বাড়ি পৌছে দিত
টোটো তে ফিরে আসার ইচ্ছেটাও ছিল
কিন্তু কেন বলব
আমিতো আমার পৃথিবীতে আমার মত একা
সাধারণ কামরায় অসাধারণ তৃপ্তি নিয়ে চলি
কিন্তু এমন মাতালের সঙ্গ পাব  কে জানে
দেখি রিক্সার হ্যান্ডেল ছেড়ে বিড়ি ধরাচ্চ্ছে
তিনচাকা তখন সর্পিল গতিতে মাঝ  রাস্তায়
পিছন থেকে ধাক্কা খেলে রক্ষে নেই
ভাবতেই পিছনে বিকট আওয়াজ
ট্রাকের খালাসির ধমক
- মরনে কা শখ হ্যায় কেয়া ......

নির্বিকার সারথি আমার
নিজের কথায় চলছে
আমি তখন রাজার  মেজাজ হারিয়ে
প্রাণ ভিখারী
ভাবছি জলপাই মোড় আর কত দূর

দলছুট একটা কুকুরের মত মানুষ
রাস্তার ধারে ভুগছে
আমার সারথির তাতে আপত্তি
- সব শালা বদমাস লম্পট
জ্যোতি বাবুর আমলই ভালো ছিল
এরা এসে সব শেষ করে লুঠ করছে
সব শালা চোরের দল

আমি ভাবছি মাতাল এবার
রাজনীতির কথা বলছে
 - মোদি  খুব ডেঞ্জার
আগামী দিন কি হবে বলা যাচ্ছে না
তবে বাংলার অধিকার ছাড়া যাবে না
বাংলার অধিকার ছাড়ব না

আমি শালা কাউকে ভয় পাই না
একটা সময় আমাদেরও  হাতে ছিল
কেউ কিছু বললেই
কোমর থেকে মাল বের করে
দিতাম ঢ্যাঢ্যাঢ্যাঢ্যাঢ্যা….

আমি তখন ভাবছি হে ইশ্বর
তোমায় প্রেম  নিবেদনের এই পরিনাম
আমারই একটা লেখা মনে পড়ছে ' মা নেই'
 -  মা নেই বলে
আমরা হয়ত মদ খেতে খেতে
মরে যাব একদিন বাগান শ্রমিকের মত
মাটি হয়ে যাবে শব
মানুষ থাকবে ডেথ সার্টিফিকেট এ
লিভার সিরোসিস হয়ে...

মনে পড়ছে
বশের মোবাইল এ আসা সেই ছবি
দিদির মুখে হিটলারের আদল
চার্লির সেই বাটার ফ্লাই গোঁফ

ও কোন সময়ের কথা বলছে
বুদ্ধের না অশোকের না গৌতমের
অশোক-গৌতম বাক যুদ্ধ চলছে আজ ও
তুমি পাগলা দাশু
তুমি গুন্ডা
- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বল
একটু তোমার মাটির দিকে তাকাও

এদিকে সর্দারজি বলছেন
পরিবর্তন চাই না
পরিবর্তন এসেছে
আমরা চাই প্রতিবাদ
প্রতিরোধ আর প্রতিকার

কিন্তু আমি কি চাই বুঝে ওঠার আগেই
সারথী আমার মাঝ পথে রিক্সা থামিয়ে
দাঁড়িয়ে বলল -
আমার তিনটা বউ
আমি তিনটা বউ পালি
আমার তিন ছেলে
আমি অভাবী নই
আমি রিক্সা চালাই
একটু মদ খাওয়ার জন্য
এক ছেলে আমার
সিকিম রুটের ড্রাইভার


দেখি ওখানে দাঁড়িয়ে ওর  মূত্রত্যাগ চলেছে
আমি ভয়ে শুকিয়ে কাঠ
ভাবছি পুলিশ এলে কি জবাব দেব
সুস্থ হলে একরকম
মাতাল হলে সমস্যা বাড়বে
কিন্তু কোথায় পুলিশ কোথায় স্বচ্ছ ভারত
ঝরনা শেষে আবার পথ  চলা  
মনে স্বস্তি নেশা ফেটেছে বোধহয়
জলপাই মোড় এগিয়ে আসবে দ্রুত



ঝকঝকে আলোয় বিনয় বাদল দীনেশ
এসে গেছি জলপাই মোড়
যেখানে হিন্দিভাষী ছাত্রদের উত্তাল  আন্দোলন
দেখেছি অপদার্থ সাধারণ  প্রশাসন 
সারথি আমার প্রবল বিক্রম দেখিয়ে ক্লান্ত
স্বরে ডাকছে অপরকে

- এই আমার কাকা কে তিনবাত্তি পৌঁছে দিবি
-কত নিবি
=কুড়ি  টাকা দেব

- এত রাতে কুড়ি টাকা ভাড়া হয়
- কেমন কথা...
তারপর দুজনের ঝগড়া শুরু

[ক্রমশ]

No comments:

Post a Comment